‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের


দেশের প্রথম যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগেই। বিজয় দিবসে এটি উৎক্ষেপনের পরিকল্পনা থাকলেও ওই দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি থাকায় তার আগেই এর উেক্ষপণ উদ্বোধন করতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইটের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করলে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের তারিখ এগিয়ে আনতে নির্দেশনা দেন।

তারানা হালিম এ বিষয়ে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এই স্যাটেলাইট উেক্ষপণ হবে এবং প্রধানমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করবেন। সেখান থেকে বাংলাদেশেও ওই উেক্ষপণ ও উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। মে মাসের শেষ দিকে অথবা জুনের প্রথম সপ্তাহে তিনি (তারানা হালিম) ফ্লোরিডায় গিয়ে অনুষ্ঠানের স্থানসহ নানা দিক সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আসবেন।

তারানা হালিম বলেন, “আমরা ১৬ ডিসেম্বরের আগেই সম্ভাব্য চারটি তারিখ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাব। তিনি যে তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন সেই তারিখেই ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট মহাকাশে উেক্ষপণ করা হবে। আমাদের ধারণা, পদ্মা সেতুর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হবে দেশবাসীর জন্য দ্বিতীয় গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধুর নামে যে স্যাটেলাইট তা তাঁর কন্যা উদ্বোধন করবেন—এটাও দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ”

স্যাটেলাইট উেক্ষপণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তারানা হালিম আরো বলেন, “এটি পরিচালনার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেড’ নামের একটি কম্পানি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই কম্পানির মাধ্যমেই ‘বঙ্গবন্ধু-১’-এর পর ‘বঙ্গবন্ধু-২’ ও ‘বঙ্গবন্ধু-৩’ নামের আরো স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করা হবে। এ কম্পানির মাধ্যমে স্যাটেলাইট বিষয়ে আরো দক্ষ জনবল প্রস্তুত করা হবে।

স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস ইতিমধ্যে তাদের ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে। স্যাটলোইট নির্মাণ, পরীক্ষা ও পর্যালোচনা শেষে এটি বিশেষ কার্গো বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের লঞ্চ সাইট কেপ কার্নিভালে পাঠানো হবে। উেক্ষপণের এক মাস আগে থেকে স্পেসএক্সের লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন ৯-এর ইন্ট্রিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরু হবে। ইতিমধ্যে স্যাটেলাইট সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট রিভিউ (এসআরআর) এবং প্রিলিমিনারি ডিজাইন রিভিউ (পিডিআর) সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণকাজও ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এন্টেনার যন্ত্রপাতি সাইটে পৌঁছে গেছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতিও দেশে চলে এসেছে। যে দ্রুতগতিতে কাজ এগোচ্ছে তাতে আমরা আশা করছি নভেম্বরেই ট্রায়ালে যেতে পারব। ”

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বিটিআরসির ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট বিষয়ে মূল কাজ শুরুর চুক্তি সই হয়। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্যাটেলাইটের কাঠামো, উেক্ষপণব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, ভূস্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনা ও ঋণের ব্যবস্থা করবে থ্যালেস অ্যালেনিয়া। ফ্রান্সের তোলুজে স্যাটেলাইটটির মূল কাঠামো তৈরি করা হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এ স্যাটেলাইটের উেক্ষপণের জন্য রাশিয়ার ইন্টারস্পুিনকের কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট কেনে বাংলাদেশ। স্যাটেলাইট উেক্ষপণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি নকশা তৈরি, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা, বাজার মূল্যায়ন, স্যাটেলাইট বাজারজাতকরণ এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করছে।

এই স্যাটেলাইট থেকে দেশ কী ধরনের সেবা পেতে যাচ্ছে—এ প্রশ্নে তারানা হালিম বলেন, ‘এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এ স্যাটেলাইট উেক্ষপণের জন্য যে ব্যয় হচ্ছে তা উঠে আসবে। এর মাধ্যমে দেশের দুর্গম এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগোযোগসেবা পাওয়া যাবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এটি আমাদের সহায়তা দেবে। এ ছাড়া এই স্যাটেলাইট আমাদের বিদেশ নির্ভরতাও কমাবে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতিবছর এক কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট হলে এ টাকা দেশেই থাকবে। ’

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিম জানিয়েছিলেন, উেক্ষপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে। এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিও বলে আসছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ হওয়ার পর সরকারের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রচারভিত্তিক সেবা প্রসার সহজতর হবে, বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিশ্বের অভিজাত দেশগুলোাত অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।

\
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment