ফেসবুকে ‘খারাপ ছবি’ কলেজছাত্রী ইতি মল্লিকের আত্মহনন

এই কোন দেশে বাস করছি আমরা মনিরামপুর উপজেলায় গতকাল শনিবার সকালে ইতি মল্লিক (১৭) নামের এক কলেজছাত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরিবার বলছে, ইতির ‘খারাপ ছবি’ ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় সে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
ইতি মল্লিকের বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামে। বাবার নাম স্বপন মল্লিক। উপজেলার মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় থেকে তার এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
গতকাল দুপুরে পাঁচবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্বপন মল্লিকের বাড়িতে শতাধিক মানুষের ভিড়। বারান্দায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন স্বপন মল্লিক। তিনি বললেন, ‘আজ (গতকাল) সকালে ফেসবুকে কিছু খারাপ ছবি দেওয়া হয়েছে। তা দেখে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। যার জন্য আমার মেয়ে মারা গেছে, তাকে আমি ছাড়ব না।’
পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতির সঙ্গে আগে পাশের কুমারসীমা গ্রামের শিমুল মল্লিকের (১৮) সম্পর্ক ছিল। সাত-আট মাস আগে ফেসবুকে পরিচয় থেকে সে খুলনার দীপ মণ্ডলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। গত শুক্রবার রাতে ‘সাগর বিশ্বাস’ নামের এক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীপ ও ইতির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের নয়টি ছবি পোস্ট করা হয়। রাত নয়টার দিকে ইতির বাবা স্বপন মল্লিকের মুঠোফোনে একটি ‘মিসড কল’ আসে। স্বপন ওই নম্বরে কল করে বুঝতে পারেন, এটি শিমুল মল্লিকের নম্বর। শিমুল জানতে চান স্বপন তাঁর সঙ্গে ইতির বিয়ে দিতে রাজি আছেন কি না। স্বপন ‘না’ সূচক জবাব দিলে শিমুল ‘কাল সকালে মোবাইলে দেখতে পাবেন’ বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। ওই রাতে মেয়েকে বকাঝকা করেন স্বপন মল্লিক। গতকাল সকাল সাতটার দিকে বাড়ির পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ইতি।
তবে শিমুল মল্লিক বলেন, শুক্রবার রাতে ‘সাগর বিশ্বাস’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীপ ও ইতির কয়েকটি খারাপ ছবি পোস্ট করা হয়। ওই ছবি তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। সেগুলো দেখেই তিনি ইতির বাবাকে ফোন করেন। ইতিকে বিয়ে করার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি বলে দাবি করেন শিমুল। সাগর বিশ্বাসটা কে, জানতে চাইলে শিমুল বলেন, ‘সম্ভবত এটা একটি ভুয়া আইডি।’
পুলিশ সকাল ১০টার দিকে ইতির লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় লাশ স্থানীয় হাজিরহাট শ্মশানে দাহ করা হয়।
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, এ ঘটনায় পরিবার কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment