ভারত কখনোই বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু নয়



বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু কে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মূল চাবি কাঠি।আমরা বাংলাদেশীরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছি যে ভারত কখনো আমাদের বন্ধু হতে পারে না। ভারত কেন আমাদের বন্ধু নয় এ প্রশ্নের জবাবে আমাদেরকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে:

১) বাংলাদেশের মানুষের চিন্তাভাবনায় ভারত অত্যন্ত সুকৌশলে একটি ভুয়া বিশ্বাস ধুমিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে ভারত আমাদের সাহায্য করেছে; সুতরাং ভারতের প্রতি আমাদের একটি সার্বক্ষণিক কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা উচিত। অথচ, বাস্তব সত্য হলো ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ্বে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলো বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সাহায্যের জন্য নয়, বরং তাঁর চিরপ্রতিদ্ধন্ধী পাকিস্তানকে দুর্বল করার জন্য যাতে ভারতের বিশাল কৌশলগত স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ভারতের এই স্বার্থগুলো নিম্নরূপ:
ক) বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে দুই খন্ড হওয়ার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন মূলত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাকে সুসংহত করেছে। এর ফলে আর ভারতকে তিনদিক থেকে ( পূর্ব পাকিস্তান ফ্রন্ট, পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্ট এবং চায়না ফ্রন্ট) তাঁর নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হচ্ছে না।
খ) ভারতের পক্ষে সে সময় পাকিস্তানের সঙ্গে আর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না, কারণ অত্যন্ত উচ্চমূল্যের নিরাপত্তা বাজেটের কারণে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করার অর্থনৈতিক সক্ষমতা তখন ভারতের নাগালের বাইরে গিয়েছিলো।
গ) বাংলাদেশকে স্বাধীন করার মাধ্যমে মূলত ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানকে ভাঙাই ভারতের প্রধান লক্ষ্য ছিলো।
ঘ) এভাবে স্বাধীনতার পর একপর্যায়ে বাংলাদেশ যখন নিরাপত্তা সংকটে পড়বে তখন বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে গ্রাস করা।
(সূত্র: ডিক্লাসিফাইড সিআইএ ডকুমেন্টস; মোরারজি দেশাই , ওয়াই বি চ্যাবন এবং জগজীবন রাম-এর ব্যক্তিগত বর্ণনা -যারা তখন সিআইএ-এর বেতনভুক্ত ছিলো )
২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের পর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর নিকট পাকিস্তানের আত্মসমর্পনের বিরোধীতা করে ভারতীয় সেনাপ্রধানের নিকট আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা করে। এর মাধ্যমেই স্বাধীন বাংলাদেশকে তাঁর জন্ম লগ্ন থেকেই ভারতের কৃপার উপর নির্ভরশীল করে রাখার ভারতীয় নীলনক্সার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
৩) ভারত তাঁর নিজস্ব স্বার্থে মুজিবের নেতৃত্বের প্যারালাল হিসেবে বাংলাদেশের প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের রিক্রুট করে ভারতীয় স্বার্থে তাদের ব্যবহার করে এবং তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়। আসম আব্দুর রব , সিরাজুল আলম খান, আব্দুল কুদ্দুস মাখনের মতো ছাত্র নেতার মাধ্যমে ভারত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, শেখ মুজিবের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবী মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ন্তর না থাকে, যদিও শেখ মুজিব কখনো পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে ছিল না।
(সূত্র: এয়ার মার্শাল আসগর খান, সাহেবজাদা ইয়াকুব খান, ডিক্লাসিফাইড সিআইএ ডকুমেন্টস; মোরারজি দেশাই , ওয়াই বি চ্যাবন এবং জগজীবন রাম-এর ব্যক্তিগত বর্ণনা -যারা তখন সিআইএ-এর বেতনভুক্ত ছিলো )
৪) ভারত জোর করে ছাত্র নেতা আসম আব্দুর রবকে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে বাধ্য করে, যাতে শেখ মুজিবের কোনো পূর্ব-অনুমোদন ছিলো না।
৫) ভারতীয় কেন্দ্রীয় কমান্ড-এর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনের পরপর ভারতীয় সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশের মূল্যবান যা কিছু আছে ( সামরিক সরঞ্জামসহ) তা লুটপাট করে বাংলাদেশ ত্যাগ করে।
(সূত্র: মেজর জলিল, সিরাজ শিকদার , মনি সিং এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী'র ব্যক্তিগত বিবরণ)
৬) ভারতীয় সেনাসদস্য যারা বাংলাদেশে যুদ্ধ করেছিল তারা ১৯৭১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের বুদ্বিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে। এ সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা জীবনের ভয়ে পালাতে কিংবা লুকানোর আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা সেসময় এমন পরিস্থিতিতে ছিলো যে তাদের পক্ষে বাংলাদেশী কাউকে হত্যা দূরের কথা এমনকি একটি প্রাণীও হত্যা করা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু, ভারতীয় মিডিয়া তাদের মিলিটারী প্রোপাগান্ডা মেশিন আর RAW নেটওয়ার্ক-এর মাধ্যমে এবং বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধ্বি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে অত্যন্ত সফলতার মাধ্যমে এই মিথ্যাগুলো বাজারজাত করতে সক্ষম হয় যে :

ক) পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের বুদ্দ্বিজীবীদের হত্যা করেছে।
খ) যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার বলেছিলো, বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি।(যদিও, এই লেখকের সাথে ব্যক্তিগত আলোচনায় হেনরী কিসিঞ্জার বলেন, কেউ যদি আমাকে একজন দক্ষ কূটনীতিবিদ বলে বিশ্বাস করেন, তাহলে তারা এই কথা কিছুতেই বিশ্বাস করবেন না যে, আমি এ ধরণের বক্তব্য দিযে পারি। কেননা, এ ধরণের বক্তব্য কখনোই কূটনীতির ভাষা হতে পারে না)
গ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষক ভারত।( যদিও এটা অনেকটা কুমিরের নিকট মানব শিশুর নিরাপত্তা আশা করার মতো)

৭) ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধাণ করছে।
৮) ভারত কখনো বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ছিটমহল গুলোতে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা কার্যকর করতে দেয়নি।
৯) চট্রগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে ভারত সশস্ত্র সহযোগীতা দিয়েছে যারা নিরীহ সিভিল মানুষকে হত্যা করছে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এখন স্বাধীনতার ডাক দিচ্ছে আর ভারত তাদের এই স্বাধীনতার অবৈধ দাবীকে আন্তর্জাতিকীকরণে সহায়তা করছে।
১০) এমনকি শেখ মুজিবের জীবদ্দশা পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে কখনো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মতো মর্যাদা দেয়নি।বাংলাদেশের মহান নেতাদের ( শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান) হত্যাকাণ্ডে ভারত নোংরা রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে জড়িত ছিলো। কিন্তু, এই ভারত-ই তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, মুজিব ও জিয়া হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত।
১১) আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে কখনো সফল হতে দিতে চায়নি ভারত। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থায় ভারত শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়ে আসছে।
১২) আমাদের অসৎ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ , সরকারী অসৎ আমলা এবং ভারতীয় দালাল তথাকথিত বুদ্বিজীবিদের সহায়তায় ভারত বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য সম্ভাবনাকে হত্যা করছে।
১৩) বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ্ব খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ নামের আরেকটি বিষাক্ত সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ভারত। ঐ সংগঠনটি এই মর্মে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, হিটলারের অধীনে জার্মানীতে যেমন ইহুদীদের হত্যা করা হয়েছিলো ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন চলছে।অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্ট দখল করে আছে বাংলাদেশী হিন্দুরা যাদের অনেকের-ই সংশ্লিষ্ট পদে চাকুরী করার যোগ্যতা নেই।
১৪) বাংলাদেশের ভূমিখণ্ড অধিগ্রহণ, ব্যবসাবাণিজ্যের ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা, ( যা প্রচন্ডভাবে ভারতের পক্ষে) এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা চুরি করে ভারত নিজেদের তৈরী পোশাক রপ্তানী করছে যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ স্লোমোশনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
এভাবে বাংলাদেশে ভারতের হস্তক্ষেপ ও অন্যায় আচরণ সম্পর্কে দিনের পর দিন লিখলেও বাংলাদেশে ভারতের অন্যায় হস্তক্ষেপের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তাহলে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে আমরা কার উপর নির্ভর করবো? আমাদের অবশ্যই আত্মজিজ্ঞাসার এসেছে, আমরা অবশ্যই নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করবো কে হতে পারে আমাদের সত্যিকারের বন্ধু যে বন্ধুত্বের নামে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে গলা টিপে ধরবে না। যখন আমাদের পানি সমস্যা দেখে দেবে তখন কে আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে? আন্তর্জাতিকভাবে, কে আমাদের জাতীয় স্বার্থে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে ? এমন আরো অনেক প্রশ্ন আছে যা আমাদের নিজেদেরকে এখনই জিজ্ঞেস করতে হবে।
কিন্তু, সবচেয়ে বড়ো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে, বন্ধু হিসেবে আমরা কাকে বিশ্বাস করবো ? কে আমাদের প্রকৃত বন্ধু, নিশ্চয়ই ভারত নয়?
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment