শেখ হাসিনার পতন এই জুনের আগেই! >> দি টেলিগ্রাফের রিপোর্ট



বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি ভবিষ্যতবাণী নিশ্চিত, তাতে শেখ হাসিনা ও তার দলের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে এবং সেটা তাদের প্রত্যাশারও কম সময়ে ঘটবে। সেটা হতে পারে বিরুদ্ধ মতবাদের দরজা বন্ধ থেকে ইসলামী গ্রুপের উত্থান থেকে। অথবা আর্মি নতুন করে ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে। এগুলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশকে বিলম্বিত করবে। কলকাতার দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায় উপ-সম্পাদকীয়তে ৩ ডিসেম্বর এ ধরনের মন্তব্য ছাপা হয়েছে।


এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর আলী রিয়াজের ফেসবুক পোষ্টে বলা হয়েছে: ‘লেট আস রিড দ্য অপ-এড পিস বাই রামচন্দ্র গুহ, ইন্ডিয়ান হিস্টোরিয়ান উইথ এন ইমপেকাবল একাডেমিক রেকর্ড’। অর্থাৎ আসুন, নিখুঁত শিক্ষাবিষয়ক কৃতিত্বের অধিকারী ভারতীয় ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহের উপ-সম্পাদকীয়টি পড়ি। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার বিষয়ক ডক্টর তাজ হাশমী তার ফেসবুকে টাইটেলটি তুলে ধরে পোষ্ট দিয়েছেন।সেই উপ-সম্পাদকীয়টি ৩ ডিসেম্বর কলকাতার দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। মূল শিরোনাম: ‘টু কোয়ায়েট টু কমফোর্ট – দ্য লুমিং পলিটিক্যাল ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ বা অস্বস্তিকর – বাংলাদেশের অনাগত রাজনৈতিক সংকট।

প্রশ্ন কী আছে সেই নিবন্ধে?


রামচন্দ্র গুহ শুরুতেই লিখেছেন, সত্তর ও আশির দশকের জনবিস্ফোরণে জর্জরিত বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল ‘বাস্কেট-কেস’ বা তলাহীন ঝুড়ি, যাকে পথ চলতে হয়েছে পশ্চিমের পাঠানো পর্যায়ক্রমিক গেমে। জেরেট হার্ডিনের মতো প্রভাবশালী জীববিজ্ঞানীরা সেই সাহায্য বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন, যাতে বাংলাদেশের মৃত্যু ঘটে, সম্ভবত সেটাই তাদের নিয়তি ছিল।এরপরই রামচন্দ্র গুহ তার উপ-সম্পাদকীয়তে ধাপে ধাপে লিখেছেন, বাংলাদেশের আম-জনতা নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো জার্নাল পড়েনি, যেখানে জীববিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা তাদের ভবিষ্যতবাণী দেন। তারা তাদের নতুন অর্জিত রাষ্ট্র বিনির্মাণে মন দিয়েছিল। ২৮ নভেম্বর টেলিগ্রাফে মুদ্রিত আগের নিবন্ধে বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের মানুষের চমকপ্রদ সাফল্য তুলে ধরেছি। তারা ভারতের চেয়েও উৎপন্ন শিল্প ছাড়াও নারী অধিকার বাস্তবায়নে নিজেদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে বিস্ময়করভাবে কাজে লাগিয়েছে।

গৃহযুদ্ধ, সাইক্লোন ও উপদলীয় রাজনীতির প্রকোপ থেকে বিকশিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সে কারণে গুরুত্ববহ। তা সত্ত্বেও যা উদ্বেগের তা রাজনৈতিক ফ্রন্টে অনগ্রসরতা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণটি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা কোনো জায়গা দিতে চায়নি। এখন নিয়তির পরিহাসটি হচ্ছে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রে আওয়ামী লীগই সেই অবস্থানে উপনীত।

বাংলাদেশের রাজনীতি সব সময়ই দুর্গম। একাত্তর পরবর্তী সরকার পরিচালনা করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার আওয়ামী লীগের কর্ণধার শেখ মুজিবুর রহমান। পঁচাত্তরে মুজিব রাজনীতিতে এক-দলীয় শাসন কায়েমের কর্মযজ্ঞ সাধন করেন। অনেক বিরোধী রাজনীতিক কারাবন্দি হন। জনরোষ সৃষ্টি হয়, অবশেষে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে, জুনিয়র অফিসাররা মুজিবকে খুন করে এবং সরকারের কর্তৃত্ব সিনিয়রদের নেতৃত্বদানকারী জিয়াউর রহমান গ্রহণ করেন|

১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকেন, তার নিহত হওয়ার পর জেনারেল এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাসীন হন। প্রায় এক দশক এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর লাগাতার বিক্ষোভ শেষে ১৯৯১ সালে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের বিধবা পত্নী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি জয়লাভ করে। পাঁচ বছর পর মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ব্যালট-বাক্সের লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন হন। ২০০১ সালে বিএনপি ফিরে আসে এবং ২০০৬ সাল নাগাদ ক্ষমতায় থাকে। এ সময় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়।২০১৩ সালের নির্ধারিত নির্বাচনের আগে বিএনপির দাবি ছিল একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আওয়ামী যেন ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়। আওয়ামী লীগ তা মেনে নেয়নি; ফলে বিএনপি ও অপরাপর বিরোধী দল সেই নির্বাচন বয়কট করে। সেই থেকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার, পার্লামেন্ট ও প্রশাসনের কর্তৃত্ব ‘আনট্রামেল্ড’ বা বাধাহীনভাবে করায়ত্ত করেছে।

Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment