বাংলাদেশে বেড়েই চলছে বিবাহ বিচ্ছেদ

২০১১ সালের এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষাতে দেখা গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ বিবাহিত দম্পতির শেষ পরিণতি হল বিবাহ বিচ্ছেদ। ২০১৭ সালে এসে তার মাত্রা বেড়েছে বৈ কমেনি। অবশ্যই ব্যাপারটি বেশ হতাশাজনক। দুজন মানুষ

একসাথে সারাজীবন কাটানোর জন্যই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

তবে ঠিক কি কারনে বিচ্ছেদ ঘটে? তবে চলুন এমন কিছু কারন নিয়ে আলোচনা করা যাক যার জন্য মূলত বিবাহ বিচ্ছেদের মতন ঘটনা ঘটে।

ব্যাক্তিত্বে অমিলঃ
২০১৩ সালে Institute for Divorce Financial Analysts একটি সমীক্ষা করে। যেখানে দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য যে কারনটি সবচেয়ে বেশি দায়ী তা হল ব্যাক্তিত্বে অমিল এবং দুজনের মাঝে পারস্পরিক অসঙ্গতি। নিজস্ব মতবাদ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ইচ্ছা সবকিছুতে যখন পার্থক্য দেখা দেয় তখন দাম্পত্য জীবন বেশ জটিল হয়ে উঠে।

আমাদের সমাজের পরিপেক্ষিতে দেখা যায় হয়ত স্ত্রী চাকুরী করতে আগ্রহী যা স্বামীর পছন্দ নয়। কিংবা স্বামীর ঘুরতে ভালো লাগে যা স্ত্রীর মোটেও পছন্দ নয়। এইসব মত বা পছন্দে অমিল স্বামী স্ত্রীর মাঝে কলহর জন্ম দেয়।

দুজন ভিন্ন ব্যাক্তিত্বের মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তারা একে অপরকে বুঝতে চায়না। অনেকক্ষেত্রে দুজনই নিজের ইচ্ছা বা মতকেই প্রাধান্য দিয়ে চলতে চায়। যা প্রতিদিনের ঝগড়া এবং সর্বশেষে বিবাহ বিচ্ছেদের কারন হয়।
আথির্ক সমস্য :
কথায় বলে অর্থই অনর্থের মূল। বেশি অর্থ যেমন অনর্থ ঘটায় আবার অর্থের অভাবও তাই। বেশ হাস্যকর হলেও খুবই বাস্তব সত্য হল এই যে, আর্থিক সমস্যা বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি প্রধান কারন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

হয়ত স্ত্রীর একটি ফ্ল্যাটের চাহিদা কিংবা একটি দামী এলইডি টিভির শখ। স্বামীর পক্ষে সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। অথবা এমনটা হতে পারে, স্ত্রী সংসারে কোন আর্থিক সাহায্য করতে পারেনা বলে প্রায় প্রতিদিনই কথা শুনতে হয়।

আমাদের দেশে এই সমস্যা ব্যাপক। বিয়ের আগে যৌতুক থেকে শুরু করে বিয়ের পর একের পর এক প্রয়োজন। বেশিরভাগ সময় এক্ষেত্রে স্বামীর আর্থিক অবস্থান দাম্পত্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি করে। আবার অনেকসময় উল্টোটাও দেখা যায়। মানে স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বেশি রোজগার করলে সেটাও নিয়েও ঝামেলা হয়। সবশেষে এই অর্থের কারনে ভেঙ্গে যায় অনেক সম্পর্ক।
সঠিক যোগাযোগের অভাবঃ

যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগাযোগ একটি বড় বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী দেশের বাইরে বা আলাদা জেলায় থাকে বলে যোগাযোগ হয়ত অনেক কম হয়। এই কম যোগাযোগ এক সময় সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং একঘেয়ামির জন্ম দেয়। যা বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়।
আবার অনেক সময় ঠিকমত যোগাযোগ হলেও যোগাযোগের ধরণ ঠিক না থাকায় সম্পর্কে অবনতি ঘটে। উচ্চস্বরে কথা বলা, বিনা কারনে সন্দেহ করা, ছোটখাটো বিষয়কে অনেক বড় করে দেখা… এই বিষয়গুলো বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী।
মানসিক প্রশান্তির অভাবঃ
বিবাহিত জীবন যখন মানসিক অশান্তির কারন হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষ বাধ্য হয়ে বিচ্ছেদের পথ বেঁছে নেয়। অপরপক্ষে অবহেলা,অকারনে সন্দেহ মনসিকতায় বেশ প্রভাব ফেলে। শারীরিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা, দুজনের আলাদা সময় না কাটানো, নিজেদের ব্যাস্ততা নিয়ে ব্যাস্ত থাকাও এর জন্য দায়ী।
কম বয়সে বিয়ে করাঃ

এক সমীক্ষায় দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমবয়সী বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য মূলত মানসিক অপরিপক্বতাকে দায়ী করেছেন। এটা খুব স্বাভাবিক যে একজন ২০/২২ বছরের মানুষের মানসিকতা আর একজন ৩০/৩৫ বছরের মানুষের মানসিকতায় যথেষ্ট ফারাক রয়েছে।

কম বয়সে মানুষের মাঝে আবেগ বেশি কাজ করে। কিন্তু সময়ের সাথে মন মানসিকতা বদলে যায়। সেই সাথে চারপাশের বাস্তবটাও। আর তখন মধুর বিবাহিত জীবন আর মধুর থাকেনা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।

কারন যাই হোক, একটি সম্পর্ক শেষ করার পুর্বে অবশ্যই বারবার ভাবা উচিত। আপনি দাম্পত্য জীবনে সুখী না হলে সমস্যাগুলো খুঁজে বের করুন। নিজের কোন ভুল আছে কিনা ভেবে দেখুন। সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।

Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment