বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, দেশের প্রথম নারী বিচারপতি

বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এবং সুফিয়া কামালকে। একটা সময় ছিল, যখন নারীরা পুরুষ শাসিত সমাজে শিক্ষার সুযোগ পেত না বলেই দেশের কল্যাণে কাজ করার মত সুযোগ তাঁদের ছিল না বললেই চলে। সমাজের দুর্ভেদ্য নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হতো তাদের। নারীদের কর্ম বলতে বোঝানো হতো ঘর-সংসারের কাজকর্মকে। সময়ের দুর্বার স্রোতে অতীতের সেসকল নিয়ম-নীতি অনেকটাই ভেসে গেছে। বর্তমান সমাজটাকে আর পুরুষশাসিত সমাজ বলার যৌক্তিকতা নেই। কারণ, এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নারীদের মর্যাদা উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। দক্ষ হাতে পার্লামেন্টে স্পীকারের দায়িত্ব পালন করছেন নারী। এছাড়া সরকারের মন্ত্রী, এমপি, বিচারক, সচিবসহ প্রশাসন ক্যাডারের বাইরেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মত চ্যালেঞ্জিং পেশায় সমান তালে এগিয়ে চলেছে আমাদের নারী সমাজ। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে শতভাগ পুরুষের দ্বারা পরিচালিত দপ্তর, বিচারালয় কিংবা অন্য যেকোন পেশায় যে নারী কর্মজীবনে প্রথম প্রবেশ করেন, তাঁকে স্মরণ করতে হয় বিনম্র শ্রদ্ধায়। বাংলাদেশের বিচারালয়ে এমন এক দৃষ্টান্ত রেখেছেন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তিনিই প্রথম নারী যিনি এ আসন অলংকৃত করেছেন। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।

১৯৭৫ সালের পূর্বে বিচার বিভাগে কোনো নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। নাজমুন আরা সুলতানাই প্রথম ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারি জজ হিসেবে নিয়োগ পান।

মুনসেফ হিসেবে নাজমুন আরা সুলতানা খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে সাব জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। পদোন্নতি পেয়ে তিনি টাঙ্গাইল, চাঁদপুর ও ফরিদপুরে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজ হিসেবে যোগদান করেন। কোনো নারীর জেলা জজ হওয়ার ঘটনা সেটাই প্রথম।

এর পর বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ২০০০ সালের ২৮ মে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। এ সময় তিনি সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে মামলা, বিএনপির আমলে বাদ পড়া ১০ বিচারপতির মামলা, আপিল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলায়ও তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম চৌধুরী আবুল কাশেম মইনুদ্দিন এবং মায়ের নাম মরহুমা বেগম রাশিদা সুলতান দ্বীন।

শিক্ষা জীবনে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ময়মনসিংহ সদরের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স মহাবিদ্যালয় থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি আনন্দমোহন মহাবিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি ময়মনসিংহ ল’ কলেজে থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সংস্থায় দু’বার সদস্য সচিব নিযুক্ত হন। তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইতালি, জাপান, আমেরিকা, ইরান, ইরাক ও ইংল্যান্ড সফর করেন।  লেখক ঃ সাখাওাত রাতুল
Share on Google Plus

About Unknown

0 comments:

Post a Comment